২০০৬ সালে গৃহীত জাতীয় খাদ্য নীতি

#প্রস্তাবনাঃ

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। জনগনের আয়ের প্রায় অর্ধেক অংশ ব্যয় হয় খাদ্য সংগ্রহের জন্য। সংবিধানের ১৫(ক) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে জনগনের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। জনগনের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে  “খাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের”. ১৯৯৬ সালে  “World Food Conference” এ বাংলাদেশ সরকার সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে উরুগুয়েতে  “GATT” চুক্তিতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ের ব্যাপারটিও উঠে এসেছিল। এর ধারাবাহিতায়  “Bangladesh Development Forum” ২০০০ সালের থেকে খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ কর্ম সূচির শিরোনাম ছিল – “A comprehensive food security policy for Bangladesh” ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম “জাতীয় খাদ্য নীতি” গৃহীত হয়েছিল। তাত্র বলা হয়েছে খাদ্য উৎপাদন, আত্ম নির্ভরশীলতাবৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সম্প্রীত গৃহীত Poverty  Reduction strategy paper (PRSP) এর ভিত্তিতে খাদ্য নীতির উন্নয়ন করা হয়েছে।

*বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান Challenge হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ। বাংলাদেশ সরকার World Food Summit declaration 1996 এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা ২০০০ সালে এলক্ষ্য নির্ধারণ করে যে, দরিদ্র জনসংখ্যার হার ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেক নামিয়ে আনা হবে। এ লক্ষমাত্রা অর্জিত হলে খাদ্য নিরাপত্তা, জনগনের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, সুষম খাদ্যের সরবরাহ পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ, দরিদ্র ও ধনীদের মধ্যে পার্থক্য ইত্যাদির মত জটিল সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে। সর্বাপরি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যখাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় কিছু কর্মসূচি হতে নিয়েছে তার মধ্যেজাতীয় খাদ্য নীতি ২০০৬” অন্যতম।

#জাতীয় খাদ্য নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ

জাতীয় খাদ্য নীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সবার জন্য নির্ভর যোগ্য খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। খাদ্য নীতির মূল বিষয় বস্তু হচ্ছে-
১) পর্যাপ্ত পুষ্টি কর খাদ্য সরবরাহ।
২) দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৩) সবার জন্য পুষ্টি চাহিদা পুরন করা। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের জন্য।

#সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাঠামোঃ

জাতীয় খাদ্য নীতির ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে সবার জন্য নির্ভর যোগ্য খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য অর্জিত হলে পূর্বের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার চেয়ে দেশে অনেক বেশি উন্নয়ন সাধিত হবে। খাদ্য নীতির সাথে জড়িত বিভিন্ন মন্ত্রানালয় ও এজেন্সি এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কর্ম সূচি হাতে নিয়েছে।

জাতীয় সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে খাদ্য নীতির উন্নয়ন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাত খনি সফল হয় যখন দেশের বর্ধিত জন গোষ্ঠী পর্যাপ্ত খাদ্য পায়। জন গনের সক্রিয় ও উৎপাদন মূখী জীবন ধারণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রধান উপায় হচ্ছে খাদ্যের প্রাচুর্য তাবৃদ্ধি করা। খাদ্যের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুধা নিবারণ করা যায় কিন্তু প্রয়োজনীয় পুষ্টি আসেনা। পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য স্বাস্থ্য সম্মতপয়ঃ নিষ্কাশন ব্যবস্থা, লিঙ্গ ভেদে খাদ্যের সুষম বন্টন প্রয়োজন।

#জাতীয় খাদ্য নীতির উদ্দেশ্য, উপায়, উপাদান ও কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হল

উদ্দেশ্য-১

খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগনের আয়ের ভিত্তিতে খাদ্যের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা পূরণকরা। নিম্মে জাতীয় খাদ্য নীতি প্রথম উদ্দেশ্যটি সফল করার কিছু উপায় বা কৌশল বর্ণনা করা হলো-

১) খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিঃ

দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অধিক খাদ্য উৎপাদন করা আবশ্যক।

আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। অনাবাদী জমি গুলোকে আধুনিক সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হলে দেশের বর্ধিত জন গোষ্ঠীর বর্ধিত খাদ্য চাহিদা পুরণ করা সম্ভব। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ সমূহ করা যায়।

২) কৃষি ব্যবস্থায় উন্নয়নের উপায়ঃ
) প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করা।
) দীর্ঘ মেয়াদী উৎপাদন ব্যবস্থা।
) গ্রামীণ সেচ ব্যবস্থার আধুনিকী করণ।
) উৎপাদন মূখী কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে জন সংখ্যাকে জন শক্তিতে রূপান্তর।

৩) পানি সম্পদের যথার্থ ব্যবহারঃ
) খাদ্যের অধিক উৎপাদনে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা প্রয়োগ।
) সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
) গভীর নলকূ পস্থাপন।
) সেচ কার্যক্রমে আধুনিক যন্ত্র পাতি ব্যবহার।

৪) কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নঃ

) মাঠ পর্যায়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
) প্রযুক্তিগত ভাবে উৎপাদিত পণ্যের অপচয় রোধ করা।
) প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
) উচ্চ ফলনশীল বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ।

৫) কৃষি ঋণঃ
) কৃষকদের পর্যাপ্ত ঋণ প্রদান করা যাতে তারা উৎপাদনে অধিক আগ্রহী হয়।
) ভূমিহীন কৃষকদের ক্ষুদ্র ঋণএর আওতায় আনা।

 

Leave a Reply