একীভূত শিক্ষা

একীভূত শিক্ষা (Inclusive education)

প্রশ্ন:একীভূত শিক্ষা বলতে কি বুঝায়?

উত্তর:শিক্ষা বিজ্ঞানের আধুনিকতম ক্ষেত্র হচ্ছে একীভূত শিক্ষা।শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার (Universal Declaration Of Human Rights, UN,1949)এর অর্ন্তভুক্ত,শিশুদের রয়েছে কোন বৈষম্য শিকার না হওয়ার অধিকার,এ ধারনা থেকেই জন্ম নিয়েছে একীভূত শিক্ষার ধারনা।১৯৯৪ সালে”World Conference on Special Needs Education ” থেকে একীভূত শিক্ষার তাগিদ আসে।এই সম্মেলনে শিক্ষাকে একীভূত করার নীতিমালার ওপর জোর সুপারিশ করা হয়।এরই ফলপ্রসূ হিসেবে পরবর্তীতে ২০০০সালের “ডাকার ” বিশ্ব শিক্ষা ফোরাম,১৯৯৬ সালে একুশ শতকের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন জোর প্রচেষ্টা চালায়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একই শিক্ষাক্রম অনুসরণে একই শ্রেণিকক্ষে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকে একীভূত শিক্ষা বুঝায়।
সংজ্ঞা বিশ্লেষণে বলা হয় যে, সব ধরনের সামাজিক,অর্থনৈতিক অবস্থানের সকল পরিবেশের এবংযে কোন দিকে অল্প প্রতিবন্ধী শিশুদের একই সাথে সমভাবে সমপরিমাণে শিক্ষা দেওয়াই হল একীভূত শিক্ষা।

আমরা বিভিন্ন স্কুল,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যালোচনা করে দেখতে পাই যে,আমাদের দেশে উচ্চবিত্তের সন্তানেরা এক ধরণের স্কুলে,মধ্যবিত্তের সন্তানেরা সাধারণ স্কুলে এবং গরীব ঘরের সন্তানেরা মাদরাসায় পড়াশুনা করে কিংবা লেখাপড়া করেনা।আর যারা দরিদ্রতার কারনে লেখাপড়া করতে পারেনা, তাদেরকে স্কুলে নিয়ে আসা অনেক কষ্টসাধ্য।আর এদেরকে “Hard to reach children “বলে।যারা Hard to reach children, আদিবাসী, বা যারা অল্পমাত্রার প্রতিবন্ধী অর্থ্যৎ সমাজে অবহেলিত এবং অধিকার বঞ্চিত,তারা যদি সমাজে সুবিধাপ্রাপ্ত শিশু ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানের সাথে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং একই শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করে তবে তাকে একীভূত শিক্ষা বলে।

প্রশ্ন:একীভূত শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তর : আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে একীভূত শিক্ষা চেতনা নতুনভাবে প্রবর্তিত হয়েছে।শিশুর জন্য সুশিক্ষা “Well education for child ” এ শ্লোগানকে বাস্তবায়নের জন্য সব শিশুর যথার্থ শিক্ষারর তাগিদে একীভূত শিক্ষা চেতনা পবর্তন করা হয়েছে।সুবিধা বঞ্চিত সকল শিশুর সুশিক্ষা সুনিশ্চিত করাই এর একমাত্র লক্ষ্য।এর গুরুত্ব নিম্নরূপ :

১.ধর্ম,বর্ণ, জাতি,বিত্ত নির্বিশেষে সকলে একসাথে লেখাপড়া করার কারণে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দূর হবে এবং ভাতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে।
২.সামান্য প্রতিবন্ধীরাও সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
৩.সমাজে মানুষের মধ্যে শ্রেনী বিভেদ কমে আসবে।
৪.মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
৫.স্কুলে ভর্তিযুদ্ধের আবসান ঘটবে।
৬.বিত্তশালীরা নিজেদের বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে সচেষ্ট হবে।
৭.সমাজে উচ্চ শিক্ষার হার বাড়বে।
৮.জেন্ডার সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
৯.সকল শিক্ষার্থীর মাঝে শিখন আগ্রহ তৈরি হবে।
১০.দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
১১.সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।
১২.শিশুদের মধ্যে মানবতাবোধ,শ্রদ্ধাবোধ,জীবনবোধ সৃষ্টি হবে।
১৩.শিক্ষার্থীদের মাঝে গনতন্ত্রবোধ জাগ্রত হবে।
১৪সকল শিক্ষার্থীর মাঝে নিজ নিজ জ্ঞান অনুধাবন ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটবে।
১৫.এই শিক্ষা দ্বারা মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
১৬.আদিবাসী শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুযোগ পাবে।
১৭.সকল ছেলে-মেয়ে শিক্ষার সমান সুযোগ ও অধিকার পাবে।
১৮. “সবার জন্য শিক্ষা” এ শ্লোগানের বাস্তবায়ন হবে।
১৯. উচ্চমেধা, মধ্যম মেধা, নিম্ন মেধার শিক্ষার্থীর একযোগে শিক্ষায়, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে।
২০. দলভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে।
২১.শিক্ষক -শিক্ষার্থীর মেধার সুবিকাশ সাধন হয়।
২২. শিক্ষায় ঝরে পড়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।
২৩শিক্ষণ -শিখনের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

এককথায় বলা যায় যে, একীভূত শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমেই দেশের শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব।

Leave a Reply