McClelland ১৯৬৪ সালে “অর্জনের জন্য প্রেরণা” তত্ত্বের ধারণা দেন। তিনি বলেন, অর্থাৎ একটি Society তে যদি প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা না থাকে তবে সেই Society উন্নতি করতে পারে না। অর্থাৎ ব্যক্তি ও সমাজ উন্নয়নের প্রতি আকাঙ্ক্ষা দেখায়, আধুনিকায়ন। যেমন- Foreign earn সহ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ভাবে এগিয়ে যাওয়ার মনোভাব পোষণ করে সেই অনুযায়ী আচরণ প্রদর্শন করে তখন সেই সমাজকে বলা যায় সর্বোচ্চ “অর্জনের জন্য প্রেরণা” প্রদানের ভূমিকা পালনকারী ।
McClelland এর মতে উদ্দোক্তার সকল কর্মকান্ডের লক্ষ কে মুনাফা অর্জন নয়। বরং মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যই অন্যান্য লক্ষ্য পূরণের পথ সুগম করে। যখন উদ্যোগী ব্যক্তির কোন কিছু অর্জনের প্রবল ইচ্ছা থাকে, ভালো চাকরি করার প্রচেষ্টা থাকে। এবং বর্তমান কর্মদক্ষতাকে আরও কার্যকর করতে চায় তাকে বলা হয় “অর্জনের অনুপ্রেরণা”.
প্রতিটি মানুষেরই কিছু অবসর সময় থাক। যদি একজন ব্যক্তি কেবল ঘুমানোর, সাতার কাটা,পান করার মধ্যদিয়েই তার সেই অবসর সময় কাটিয়দ দেয় তাহলে বুঝে নিতে হয় তার “অর্জনের অনুপ্রেরণা” খুব কম।
যদি কেউ তার অবসর সমিয় বন্ধু, পরিবার, সামাজিক মেলামেশা, সৈকত পার্টিতে কাটিয়ে দেয় তবে তার “অর্জনের অনুপ্রেরণা” ও খুবই নিম্ন।
কেবলমাত্র যে ব্যক্তি তার বর্তমান অবস্থার উত্তরণের চেষ্টা চালায় ও বিদ্যমান কাজগুলোকে আরও কার্যকর উপায়ে সমাধান করার চেষ্টা করে তবে তার ভাল মনের “অর্জনের অনুপ্রেরণা” রয়েছে বলে মনে কর হয়।
“অর্জনের অনুপ্রেরণা” পরিমাপের ক্ষেত্রে McClelland ২ভাবে বের করার চেষ্টা করেছেন।
১) ব্যক্তি পর্যায়ে (Individual)
২) জাতীয় পর্যায়ে (National)
ব্যক্তি পর্যায়ে “অর্জনের অনুপ্রেরণা” পরিমাপের জন্য McClelland প্রথম একটি ছবি দেখান ও তার গবেষণার বিষয় (ব্যক্তিকে) কে একটি গল্পলিখতে বলেন। প্রত্যেকটি গল্পের উপাদান বিশ্লেষণের মাধ্যমে গল্পকথকের “অর্জনের অনুপ্রেরণা” নিরুপনের চেষ্টা চালানো হয়।
McClelland এর মতে গল্পকথম কে গল্পই বলেন না। বরং গল্প বলার মাঝেই নতুন কিছু অর্জনের স্পৃহা লুকায়িত থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ঝুলন্ত ব্রিজে ছবি দেখিয়ে দু’জনকে মতামত দিতে বলা হলো। একজন বললো, “বাহ! জায়গাটা কত সুন্দর । অবশ্যই এখানে ঘুরতে যাওয়া উচিত। অপরদিকে দ্বিতীয়জন বললো, ” ঝুলন্ত ব্রিজটাকে আরেকটু সৌন্দর্যমন্ডিত করা যেতো, দু পাশে আরেকটু প্রশস্ত করলে বোধ হয় মানুষ চলাচলে সুবিধা হতো।
উপরোক্ত দু’জনের গল্পের বক্তব্য ভিন্ন। গল্প শুনেই বুঝা যায় “অর্জনের অনুপ্রেরণা” প্রথমজনের তুলনায় দ্বিতীয় জনের অনেক বেশি।
জাতীয় পর্যায়ে “অর্জনের অনুপ্রেরণা” পরিমাপের জন্য McClelland কিছু জনপ্রিয় সাহিত্য সংগ্রহ করেন। যেমনঃ ফোক গান, কৌতুকের বই, কবিতা, নাটক ও শিশুদের গল্প যা পাঠ্যপুস্তকে রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আমাদের দেশের সংগীত কিংবা গল্পের বইতে কিংবা সিনেমাতেও কেবল প্রেম, বেদনা, বিরহ এসব উপাদান বিদ্যমান। কাজেই আমরা আবেগ নির্ভর বিবেক দিয়ে নিজেদের পরিবর্তনের জন্য ইতিবাচক চিন্তা করতে পারি না।
ইউরোপীয় রাষ্ট্র গুলোতে তাদের নির্মিত সিনেমা কিংবা সিনেমাতেও রাষ্ট্র হিসেবে তারা আগামীতে নিজেদের কোন জায়গায় দেখতে চায় তা ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়। অর্থাৎ বুঝাই যাচ্ছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র গুলোর তুলনায় উন্নত রাষ্ট্র গুলোর “অর্জনের অনুপ্রেরণা” অনেক বেশি মাত্রায় বিদ্যমান।
এর পরপরই McClelland প্রশ্নতুলেন এই অর্জনের অনুপ্রেরণার সাথে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক কি? তার গবেষণা থেকে তিনি দেখান যে, যে রাষ্ট্রের অর্জনের অনুপ্রেরণা যত বেশি সে রাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তত বেশি।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে “সময় জ্ঞান” খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্জনের অনুপ্রেরণার উত্থান ও পতনের সাথে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
উদাহরণস্বরূপ ঊনিশ শতকে গ্রেট ব্রিটেনের “অর্জনের অনুপ্রেরণা” স্কেল ছিল উচ্চপর্যায়ে। কিন্তু ১৯৫০ এর আগে গড়ে সেখানকার “অর্জনের অনুপ্রেরণা” স্কেল কেবল নিম্ন মুখী ছিলো।
অন্যদিকে ফ্রান্স, রাশিয়া ও জার্মানির অর্জনের অনুপ্রেরণা ঊনিশ শতকে খুব কম থাকলেও ১৯৫০ এর দিকে “অর্জনের অনুপ্রেরণা” স্কেল উর্ধ্বমুখী ছিলো।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের “অর্জনের অনুপ্রেরণা” স্কেলে অগ্রসরতার মাত্রা ১৯৫০ এ প্রায় সমান থাকলেও পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্কেল উর্ধ্বমুখী হতে থাকে ও যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন স্কেল নিম্নমুখী হতে থাকে।
McClelland মনে করেন একটি রাষ্ট্রের “অর্জনের অনুপ্রেরণার” সাথে “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খাপ খাইয়ে নিতে নূন্যতম ৫০ বছর সময় লাগে।
সর্বশেষ McClelland বলেন, এই “অর্জনের অনুপ্রেরণা” কোথা থেকে আসে? একজন মনস্তাত্ত্বিক হিসেবে McClelland আঙুল তুলেন পরিবারের দিকে, বিশেষ করে পিতামাতা কেন্দ্রিক সামাজিকীকরণ দিকে।
প্রথমত, পিতামাতাকে উচ্চমান সম্পন্ন অর্জনের অনুপ্রেরণা দিতে হবে তাদের সন্তানকে যাতে তারা শিক্ষা অর্জনে সর্বোচ্চ মাত্রা অর্জন করতে পারে। ভাল চাকরি পেতে পারে এবং সমাজে সুপরিচিত ও সম্মানিত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, পিতামাতা তার সন্তানকে উৎসাহ উদ্দীপনা দানে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করবে এবং সামাজিকীকরণে বিশেষভাবে উদ্ভুদ্ধ করে। যদি তাদের সন্তানরা কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে তবে তাদের প্রশংসা করবে ও পুরষ্কিত করবে যাতে তারা বাকি কাজগুলো সঠিকভাবে করার চেষ্টা চালায়।
তৃতীয়ত, পিতামাতাকে অবশ্যই কর্তৃত্ব পরায়ন হলে চলবে না। তারা তাদের সন্তানের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকবে না, যাতে তাদের সন্তানেরা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি খাটাতে পারে এবং ভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
সর্বশেষ বলা যায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য “অর্জনের অনুপ্রেরণা” স্কেল বৃদ্ধি করা আবশ্যক। কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর্থিক সাহায্য, প্রযুক্তিগত সাহায্য ও পরামর্শই নয় বরং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে একটি দল থাকলে হবে যারা অতিমাত্রায় “অর্জনের অনুপ্রেরণা” প্রত্যাশি এবং তারা বহিরাগত সাহায্যকে উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কার্যকর ভাবে ব্যবহার করবে। সর্বোপরি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে উন্নত রাষ্ট্র গুলোর সাথে সুহৃদপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।