SMELSER (1964) তৃতীয় বিশ্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে “গঠনগত বিভেদ” ধারণা দেন। তিনি মনে করেন মডার্নালাইজেশন মূলত “গঠন বিভেদ” এর সাথে সংশ্লিষ্ট ।
তিনি গঠনগত বিভেদের একটি উদাহরণ হিসেবে পরিবারের কথা উল্লেখ করেন। প্রাচীন সমাজে পরিবারের গঠনতন্ত্র ছিলো বেশ জটিল। আকারে বৃহৎ, বহুমাত্রায় উৎপাদনশীল, একছাদের নিচে আত্বীয় স্বজন নিয়ে একসাথে থাকা, অর্থাৎ বহুমুখী ক্রিয়া নিষ্প্নকারী । এটি কেবল প্রজনন এবং আবেগের সমর্থনের কাজেই করতো না, যেই সাথে উৎপাদন (পারিবারিক খামার), শিক্ষা (অনানুষ্ঠানিক, পিতামাতার মাধ্যমে সামাজীকীকরণের) কল্যাণ সাধন (শিশু ও বৃদ্ধ যত্ন নেওয়া)নিশ্চিত করতো।
আধুনিক সমাজ “গঠনগত বিভেদ” এর সাথে মানিয়ে নিয়েছে। এর গঠনও তুলনামূলক সরল। এটি আকারে ছোট ও কেন্দ্রীভূত । আধুনিক পরিবার তার কার্যক্রম অনেকাংশেই কমিয়ে নিয়েছে।
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলো কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নিয়েছে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুণদের শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার মানুষের কল্যাণের দায়িত্ব নিয়েছে।
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান কেবল একটি নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ। এবং বর্তমানের প্রতিষ্ঠান গুলো বেশি ভালো কাজ প্রদর্শন করছে পূর্বের পরিবার প্রতিষ্ঠানের তুলনায়। আধুনিক সমাজ অধিক উৎপাদনশীল, শিশুরা অধিক মাত্রায় শিক্ষিত হচ্ছে এবং অভাবগ্রস্থরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে।
SMELSER আধুনিক সমাজের “গঠনগত বিভেদ” নিয়ে কথা বলার পর যে বিষয় নিয়ে কথা বলেন তা হলো, “একত্রীকরণের সমস্যা” অর্থাৎ এত এত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যাবলীর সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। প্রাচীন সমাজে পরিবার ব্যবস্থায় এই একত্রীকরণের সমস্যা তৈরি হতো না। যেমন অর্থনৈতিক উৎপাদন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো পরিবার । শিশুরা পারিবারিক খামারে কাজ করতো ও নিরাপত্তার জন্যেও পরিবারের উপর নির্ভরশীল ছিলো।
বর্তমানে আধুনিক সমাজে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এর সমন্বয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শিশুদের পড়াশোনা ও চাকরির জন্য ঘরের বাহিরে যেতে হয়। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে । কেননা পরিবার আগের মতো নিরাত দিতে পারছে না। ফলে একত্রীকরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন নতুন প্রতিষ্ঠান ও নিয়ম তৈরি করতে হবে যাতে নতুন ভাবে তৈরিকৃত “গঠনগত বিভেদ” নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমনঃ কলেজস্থানে অফিস নির্মাণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানোর মাধ্যমে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গুলো একত্রে নিয়ে আসা। কর্মকর্তাদের অপব্যবহার থেকে কর্মচারীদের রক্ষার জন্য শ্রমিক ইউনিয়ন সহ শ্রমিকদের বিভিন্ন বিভাগে নিরাপত্তা কার্যক্রম গড়ে তোলা।
বেশ কিছু কারণে একত্রীকরণের সমস্যা সমাধানে সন্তুষ্টি আসে না। তার মধ্যে রয়েছে “মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব”. অর্থাৎ নতুনভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত করে দেওয়া মূল্যবোধের মিল না থাকলে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব ।
আরেকটি সমস্যা হলো ” অসম উন্নয়ন ” অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান যে হারে তৈরি হবে তার সাথে সমতা বিধান রাখার মতো উপাদান তৈরি না হওয়া। যেমনঃ নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হলো ও কর্মচারীরা, কর্মকর্তাদের দ্বারা নিগৃহীত হলো। কিন্তু এসব মোকাবেলা করতে কোন শ্রমিক সংস্থা/ইউনিয়ন গড়ে না ওঠাই অসম উন্নয়ন।
SMELSER বলেন, “গঠনগত বিভেদ” ও “একত্রীকরণের সমস্যা” থেক্স তৈরি হয় “সামাজিক উপদ্রব”
এসব সামাজিক উপদ্রব রূপ নিতে পারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, জাতীয়তাবাদে, বিপ্লবে ও গেরিলা যুদ্ধে। সামাজিক উপদ্রব বৃদ্ধির ফলে তৃতীয় বিশ্বের গ্রামীণ এলাকায় উৎপাদন যখন বিশ্ববাজারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন যেখানে দারিদ্র পিড়ীত কৃষকদের বা শ্রমিকদের একটা দল তৈরি হয় যারা স্থানীয় সম্পদায় থেকে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তারা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য সদস্য দিয়ে থাকে নিয়মিতভাবে ও তারাও কমুনিষ্ট ভাবধারার সাথে মিশে যায়।
অর্থাৎ SMELSER বোঝাতে চেয়েছেন মডার্নালাইজেশন মসৃণ ও সুরেলা পদ্ধতিতে হয় না। বরং ওটা সনাতন সমাজের বহু পরিবর্তনের ফলে পাওয়া একটি সমাজ। তিনি তৃতীয় বিশ্বে মোটাদাগে মডার্নালাইজেশন এর যে সমস্যা দেখিয়েছেন-
১)গঠনগত বিভেদ (Structural Differentiation)
২) একত্রীকরণের সমস্যা (Problem of Integration) অসম উন্নয়ন (Unseen Development)
৩) সামাজিক উপদ্রব (social Disturbances)