উপস্থাপনাঃ গ্রামীণ উন্নয়নের ইংরেজি শব্দ হলো Rural Development. উন্নয়নশীল বিশ্বে গ্রামীণ উন্নয়ন শব্দটি বহুল প্রত্যয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য যে সকল আদর্শ গ্রহণ করা হয় তাকে গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল বলে। পল্লী উন্নয়নের বহুমুখী কর্মসূচী বাস্তবায়নের অন্যতম মডেল হচ্ছে কুমিল্লা মডেল। বস্তুত পক্ষে বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের মডেল বলা হয় কুমিল্লা মডেলকে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
*মডেলঃ গ্রামীণ উন্নয়ন মডেল সম্পর্কে আলোচনা পূর্বে প্রথম আমাদের জানা দরকার মডেল কি? মডেল হলো বাস্তবতা সম্পর্কে একটি চিত্র। মডেল বলতে আমরা অনেকসময় বড় জিনিসের ছোট নমুনা বুঝি। আবার আদর্শের প্রতিফলন করে এমন একটা উদ্যোগকে বুঝি।
সমাজ বিজ্ঞানী Philips বলেন, “Model is a leper sensation of some phenomenon on inage of it.
সুতরাং মডেল বলতে আমরা সংক্ষিপ্ত ও সম্পর্কিত উপাদানের রূপরেখাকে বুঝি। অর্থাৎ উন্নয়নের মডেল বলতে গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ক চলকের বাস্তব প্রতিমূর্তিকে বুঝায়।
*কুমিল্লা মডেলঃ
→প্রতিষ্ঠাঃ ষাটের দশকে পল্লীর প্রধান সমস্যা ছিল উৎপাদন ও খাদ্য ঘাটতি। এ সমস্যা কে সামনে রেখে Food foundation ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা ও অর্থানুকূল্যে কুমিল্লা মডেলের গোড়াপত্তন হয়। ১৯৫৯ সালের কুমিল্লার কোটবাড়িতে ড. আখতার হামিদ খানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। Bangladesh academy for Rural Development (BARD)। এ বোর্ডেই পরবর্তীতে কুমিল্লা মডেল হিসেবে পরিচিত পায়। এ মডেলের মূল্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভূমি মালিকানায় বিদ্যমান কাঠামোগত অবস্থায় কোন রূপ পরিবর্তন সাধন না করে পল্লী উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
*পল্লী উন্নয়নে কুমিল্লা মডেলের ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন কুমিল্লা মডেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে পল্লী উন্নয়নে কুমিল্লা মডেলের ভূমিকা তুলে ধরা হলো-
*কৃষক উন্নয়নঃ বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখে কুমিল্লা মডেল। কৃষকদের সংগঠিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান ও পরিশোধে কুমিল্লা মডেল অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কৃষকদের মধ্যে সাজ- সরঞ্জাম ট্রাক্টর, লাঙল ও প্রসার এবং উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করে কৃষির উন্নয়নে বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতিকে অবদান রাখছে।
*ঋণ সরবরাহ-
*মূলধন গঠনঃ কুমিল্লা সমবায় গ্রামীণ কৃষকদের সঞ্চয়ে উদ্ভুদ্ধ করে থাকে। বাধ্যতামূলকভাবে সমিতির সদস্যদের সঞ্চয়ের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করার ফলে মূলধন গড়ে উঠে। যা কৃষকদের ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ কুমিল্লা সমবায়ের অধিনে গ্রামীণ জনসাধারণ তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় একত্রিত করে কৃষকদেরকে প্রয়োজন অনুসারে ঋণ প্রদান করে। এ ঋণ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়। ফলে কৃষকদের আয় ও সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়।
*উৎপাদন বৃদ্ধিঃ
→ কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
→অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
কুমিল্লা সমবায় সমিতি ১৯৬২-৬৩ সালে PL- ৪৮০ এর আওতায় ২৫ মিলিয়ন টাকার সাহায্য পায়। যা দ্বারা ৩৬৮০ মাইল নতুন রাস্তা তৈরি করে। তাছাড়া ৮৭০০ মাইল পুরাতন রাস্তা মেরামত ১৬০০ মাইল নতুন খাল খনন। এবং ৪৫০ মাইল পূনঃখনন করা হয়। তাছাড়া বাধ নির্মাণ কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ সুইজগেট নির্মাণ প্রভৃতি অবকাঠামোগত উন্নয়ন কুমিল্লা মডেল করে।
*কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ ও মওজুদ কুমিল্লা মডেলের নানা মুখি উদ্যোগের ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সমবায়ের আওতায় গুদামজাত করণ ও বাজারজাত করণে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কৃষি পণ্যের কৃষকরা নগদ মূল্য পেয়ে থাকে।